শুক্রবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১০

বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে শুল্কমুক্ত প্রক্রিয়ায় তুলা আমদানি শুরু


ভারতীয় তুলা রফতানিকারকরা আদালতের রায় নিয়ে ৬ মাস বন্ধ থাকার পর আবারো শুল্কমুক্ত প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশে তুলা রফতানি শুরু করেছে। রোববার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে ৮ হাজার ২৫৩ বেল তুলা ১৪৪ ট্রাকে আমদানি হয়েছে ভারত থেকে। তুলার পরিমাণ ১৪ লাখ ৯ হাজার ৪৩৫ কেজি। দীর্ঘদিন এ বন্দর দিয়ে তুলা আমদানি বন্ধ থাকায় বন্দরের শ্রমিকরা মানবেতর জীবনযাপন করছিল। নতুন করে তুলা বন্দরে প্রবেশের পর তাদের চোখেমুখে আবারও হাসির রেখা ফুটে উঠেছে।
ওপারের তুলা রফতানিকারক ও সিএন্ডএফ এজেন্ট মেসার্স এলজি ডব্লিউ লিমিটেডের ম্যানেজার দিপক বাবু জানান, চলতি বছরের ৯ এপ্রিল পত্র নং-৩০/১০-এর এক প্রজ্ঞাপনে ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয় তুলা রফতানির ক্ষেত্রে টনপ্রতি আড়াই হাজার ভারতীয় রুপি শুল্ক আরোপ করে। সেই সাথে ভারতীয় কটন কর্পোরেশনের অনুমতিপত্র কলকাতার পরিবর্তে দিল্লি থেকে আনার নির্দেশ দেয়। এরপর ১৯ এপ্রিল বাজার নিয়ন্ত্রণের নামে হঠাৎ করে বাংলাদেশে তুলা রফতানির ওপর সরাসরি নিষেধাজ্ঞা জারি করে ভারত সরকার। সেই থেকে তুলা আমদানি বন্ধ হয়ে যায় বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে। ভারত সরকারের তুলা রফতানিতে শুল্ক আরোপ ও কটন কর্পোরেশনের প্রত্যয়নপত্র দিল্লি থেকে নেয়ার আদেশের প্রতিবাদে ভারতীয় তুলা রফতারিকারক এসোসিয়েশন ভারতীয় হাইকোর্টে একটি মামলা করে। দীর্ঘদিন মামলা চলার পর সম্প্রতি আদালত শুল্কমুক্ত তুলা রফতানি করা ও কটন কর্পোরেশনের প্রত্যয়নপত্র দিল্লির পরিবর্তে কলকাতা অফিস থেকে নেয়ার পক্ষে রায় দেন। রায় পাওয়ার পরপরই ভারতীয় রফতানিকারকরা রোববার থেকে বাংলাদেশে শুল্কমুক্ত প্রক্রিয়ায় তুলা রফতানি শুরু করে।
বেনাপোল চেকপোস্ট কাস্টমস কার্গো অফিসার ফজলুর রহমান জানান, রোববার দুপুর থেকে তুলা নিয়ে ১৪৪টি ভারতীয় ট্রাক বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করেছে।
বিডি রিপোর্ট 24 ডটকম অবলম্বনে

16/05/2010 ॥ বিশ্ববাজারে তুলার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার কমপক্ষে ২০ শতাংশ উৎপাদন কমবে। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় ভারত, পাকিস্তানসহ দৰিণ এশিয়ার দেশগুলো বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। ভারত ইতোমধ্যে তুলা রফতানির ওপর নগদ সহায়তা প্রত্যাহার করেছে। পাকিস্তান তুলা রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে। চীন নিয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। সুতার বাজার নিয়ন্ত্রণে সর্বশেষ বাংলাদেশ বেনাপোল স্থল বন্দর সুতা আমদানির জন্য খুলে দিয়েছে।
সূত্রমতে, তুলার সঙ্কট থাকায় আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বেড়েছে। কয়েক মাসের ব্যবধানে প্রতিপাউন্ড তুলার দাম বেড়েছে গড়ে ৪০ সেন্ট। বর্তমান আন্তর্জাতিক বাজারে এক পাউন্ড তুলার মূল্য হচ্ছে ৯০ সেন্ট থেকে এক ডলার। কয়েক মাস আগেও এই তুলার মূল্য ছিল ৬০ সেন্ট। এভাবে মূল্য বৃদ্ধির ফলে আমদানিকারক দেশগুলো পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করে। গত বছর ভারতে তুলার উৎপাদন বেশি হয়। কিন্তু এ বছর কম উৎপন্ন হওয়ায় ভারত তুলা রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। সূত্র জানায়, ভারতের ৬৫ শতাংশ কাঁচা তুলা রফতানি হচ্ছে চীনে।
সূত্র মতে, ভারতে তুলার মূল্য সম্প্রতি ৫৪ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে ভারত তুলা রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এ ছাড়া ভারত তুলা রফতানির ওপর নগদ সহায়তা প্রতিটনে ৫ হাজার রুপী প্রদান করে। পরিস্থিতি সামাল দিতে এবং রফতানি নিরুৎসাহিত করতে নগদ সহায়তা প্রত্যাহার করে নেয়। তুলা রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে কয়েকটি আমদানিকারক দেশ ভারতের কাছে আবেদন জানায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা কার্যকর হয়নি। এদিকে সঙ্কটের কারণে পাকিস্তান তুলা রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে। চীন তুলা না পেয়ে বিশেষ পদৰেপ নিচ্ছে। সর্বশেষ পদক্ষেপ হিসেবে বাংলাদেশও সুতা আমদানির জন্য বন্দর খুলে দিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তুলা আমদানির জন্য বাংলাদেশ ভারতের ওপর নির্ভরশীল হচ্ছে। গত ২১ এপ্রিল ভারত সরকার অভ্যন্তরীণ বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য তুলা রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এর পর থেকে এ দেশের বাজারে সুতার মূল্য বাড়তে থাকে। তুলা আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর মতে, ছয় মাস আগে তুলার মূল্য প্রতিপাউন্ড ছিল ৭২ সেন্ট। ওই তুলার মূল্য বর্তমানে উঠেছে ৯৯ সেন্টে। ফলে সুতার মূল্য বেড়েছে। সর্বশেষ তথ্যমতে প্রতিপাউন্ড সুতার মূল্য দাঁড়ায় ৪.১০ ডলার। সুতার এই অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কারণে সরকার আমদানির জন্য বেনাপোল বন্দর খুলে দিয়েছে।
এ ব্যাপারে সুতা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান টেঙ্টাইল এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হাই সরকার জনকণ্ঠকে জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে তুলার সঙ্কটে মূল্য বৃদ্ধি, অভ্যন্তরীণ বাজারে গ্যাস ও বিদ্যুত সমস্যার কারণে সুতার মূল্য বেড়েছে। সুতা তৈরিতে তুলা কেনা বাবদ খরচ হয় ৬৫ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর খুলে দেয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন সরকারের এ সিদ্ধান্ত খুব একটা সুফল বয়ে আনবে না। তবে এ ধরনের সিদ্ধান্ত স্থানীয় শিল্পকে চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দিয়েছে। সরকার এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের মতামত, এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিলে এর প্রভাব এবং কমিটি গঠন করে যাচাই-বাছাই করতে পারত। তিনি আরও বলেন, জুন থেকে আগস্ট এই সময়ে তুলার ঢল বাজারে থাকে। এ সময়ে এ সিদ্ধান্তের কারণে অনেকের তুলা অবিক্রীত থেকে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ ব্যাপারে তৈরি পোশাক শিল্পের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি সালাম মুর্শেদী জনকণ্ঠকে জানান, সুতা আমদানির ব্যাপারে সরকারের এ সিদ্ধান্তে স্থানীয় বাজারে সুতার সরবরাহ ও মূল্য স্থিতিশীল থাকবে। সুতার দামও স্বাভাবিক পর্যায়ে নেমে আসবে। ভারতের বাজারে তুলনামূলক সুতার দাম কম। বেনাপোল বন্দর খুলে দেয়ায় দীর্ঘমেয়াদে স্থানীয় বাজারে সুতার দাম স্থিতিশীল থাকবে। তিনি আরও বলেন, বন্দর খুলে দেয়ার সঙ্গে স্থানীয় স্পিনিং ও কটন মিলগুলো যাতে কোন সমস্যায় না পড়ে সেদিকে সর্তক নজর রাখতে হবে।
নিটওয়্যার শিল্পের সংগঠন বিকেএমইএ সভাপতি ফজলুল হক জনকণ্ঠকে জানান, শর্ত দিয়ে বেনাপোল বন্দর খুলে দেয়া হয়েছে। এই শর্ত জুড়ে দেয়ার কারণে বন্দর খুলে দেয়ার উপকার কম হবে। আমরা দাবি করেছি শর্তহীনভাবে বেনাপোল বন্দর খুলে দেয়ার জন্য।
সূত্রমতে দেশে ১০ লাখ মেট্রিক টন সুতার চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে নিট শিল্পের চাহিদা হচ্ছে সাত লাখ মেট্রিক টন এবং তাঁতসহ ড্রাইভিং শিল্পের চাহিদা হচ্ছে ৩ লাখ মেট্রিক টন। স্থানীয় স্পিনিং মিলগুলো বছরে ৬ লাখ মেট্রিক টন সুতা উৎপাদন করছে যার ৮৫ শতাংশ যাচ্ছে নিট শিল্পে এবং ১৫ শতাংশ যাচ্ছে তাঁত শিল্পে।
হৃদয়ে  বাংলাদেশ অবলম্বনে

কোন মন্তব্য নেই: